বাজারে অন্য অনেক পণ্য স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে থাকলেও চাল ও তেল নিয়ে অস্থিরতা গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। এরমধ্যে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৬ টাকা বেড়েছিল, যা এখন পাইকারি পর্যায়ে ১-২ টাকা করে কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে সয়াবিন তেলের যে সরবরাহ সংকট ছিল, সেটা এখনো কাটেনি, বরং আরও বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে সয়াবিন তেলের দাম ও সরবরাহ সংকট। দেড় মাস আগেও এ ধরনের সরবরাহ সংকট তৈরি করেছিল কোম্পানিগুলো। এরপর সরকার কেজিপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা করে বাড়িয়ে দেয়। এরপর দু-এক সপ্তাহ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও সংকট তৈরি হয়েছে। খিলগাঁও তালতলা বাজারে প্রায় ১০টি দোকান ঘুরে তিনটি দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। সেখানে ইউনুস হোসেন নামে এক বিক্রেতা জানান, কোম্পানি সরাসরি তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। তাদের কিছু ডিলার এখন তেল বিক্রি করছে ব্ল্যাক মার্কেটের মতো নিজের দোকান থেকে। সেটাও আমাদের কাছে-ই গায়ের রেটে বিক্রি করছে, সে তেল নিজে পরিবহন খরচ দিয়ে দোকানে এনে বিক্রি করলে প্রতি লিটার তেলে দু-তিন টাকা বেশি দাম পড়বে। কিন্তু আমরা ক্রেতার কাছে বেশি দাম নিতে পারবো না। তাই তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি’- বলেন এ বিক্রেতা। এদিকে, কিছু কোম্পানি তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কেনার শর্ত বেঁধে দিচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন। অর্থাৎ কোম্পানির কাছ থেকে তেল নিতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে চাপাতা, আটা বা অন্য কোনো পণ্য অর্ডার দিতে হচ্ছে। এসএম ট্রেডার্সের মালিক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ডিলাররা পাইকারি পর্যায়ে তেলের দাম লিটারে প্রায় ৪ টাকা বেশি নিচ্ছেন। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছ থেকে বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি নিতে পারছেন না। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, রমজান সামনে রেখে কোম্পানি এবং বড় বড় ডিলার-মজুতদাররা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। আবু হেনা নামের একজন ক্রেতা বলেন, দেশে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলো, কিন্তু এই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে আমরা রক্ষা পেলাম না। পত্র-পত্রিকায় দেখছি, সরকারও বলছে বাজারে পণ্যের কোনো সরবরাহ সংকট নেই। কিন্তু বাজারে এলে চিত্রটা ভিন্ন। কেন এসব কোম্পানি বা মজুতদারদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর হতে পারিনি? এটি আমাদের দুর্বলতা। অন্যদিকে, দেশের চালের মোকামগুলোতে চালের দাম সামান্য কমেছে। যার প্রভাবে রাজধানীর কিছু পাইকারি চালের দোকানে চালের দাম কমতে দেখা গেছে। তবে খুচরায় সেভাবে দাম কমা শুরু হয়নি এখনো। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই খুচরা পর্যায়েও চালের দাম কমবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি বাড়ার কারণে মোকামগুলোতে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে গত চার-পাঁচ মাসে প্রতি কেজি চালের দাম ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। যা এখন এক-দুই টাকা করে কমছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। মাঝারি চাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা ও সরু চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে সবজির বাজার এখনো নাগালের মধ্যে রয়েছে। বাজারে এখনো শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামও অনেকটাই কম। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে মিলছে নতুন আলু। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজির মধ্যে। এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং লম্বা লাউ (শীতকালীন লাউ) প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। এদিকে, বাজারে মুরগির দাম এখনো চড়া। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালী মুরগির কেজি মানভেদে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরায় ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজান সামনে রেখে ডাল ও ছোলার দামে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং ছোলা ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বাজারে চাল ও তেল নিয়ে অস্থিরতা কাটছে না
- আপলোড সময় : ০৮-০২-২০২৫ ০৪:১৯:৪৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০২-২০২৫ ০৪:১৯:৪৬ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ